
শরীয়তপুরের জাজিরায় উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে পদ্মাপারের একটি খাল বালু দিয়ে ভরাট করা হচ্ছে। উপজেলার বিলাসপুরে ওই খাল ভরাটের পর সেখানে ভূমিহীনদের জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণ করা হবে। ওই খাল দিয়ে আশপাশের কৃষিজমিতে পানি আসা-যাওয়া করে। বর্ষা মৌসুমে স্থানীয় ব্যক্তিরা নৌকা ও ট্রলার নিয়ে খালটিতে চলাচল করেন। নদী থেকে প্রবহমান খালটি বন্ধ করলে কৃষকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন বলে জানিয়েছেন। সেই সঙ্গে বর্ষায় যাতায়াতে ভোগান্তি পোহাবেন স্থানীয় ব্যক্তিরা।
যদিও উপজেলা প্রশাসনের দাবি, খালের কারণে নদীভাঙন বেশি হয়। তাই তার কিছু অংশ ভরাট করে খাসজমি উদ্ধার করা হচ্ছে। এ দাবির সঙ্গে একমত নন স্থানীয় ব্যক্তিরা।
জাজিরা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্প–২-এর আওতায় জাজিরার বিভিন্ন স্থানে খাসজমিতে গৃহহীনদের পাকা ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হচ্ছে। ওই ঘরের সঙ্গে ভূমিহীন ব্যক্তিদের ২ শতাংশ করে জমি দেওয়া হচ্ছে।
২১ এপ্রিল সরেজমিনে কাজিয়ারচর এলাকায় দেখা যায়, নড়িয়া-জাজিরা সড়কের বিলাসপুর এলাকা থেকে পদ্মা নদীর তীরের দিকে একটি সড়ক গেছে। ওই সড়কের পাশ দিয়ে ২০-২৫ ফুট প্রশস্ত একটি খাল প্রবাহিত হয়েছে। পদ্মা নদী থেকে খালটি বিলাসপুর খালে গিয়ে মিলেছে। কাজিয়ারচর বাজারের পাশের সড়কের একটি সেতুর কাছে খালটি বন্ধ করে বালু দিয়ে ভরাট করা হচ্ছে।
স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জাজিরার বিলাসপুর ইউনিয়নের কাজিয়ারচর গ্রামটি পদ্মা নদীর তীরঘেঁষা। ওই গ্রামে পদ্মা নদীর তীরে সমিরউদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় ও কাজিয়ারচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। তার পাশে ছোট একটি বাজার। নদীভাঙনের কারণে গ্রামটির অধিকাংশ মানুষ অন্যত্র চলে গেছেন। গ্রামের এক পাশ দিয়ে পদ্মা নদী থেকে বিলাসপুর পর্যন্ত একটি খাল প্রবাহিত হয়েছে। ওই খালের পশ্চিম দিকে ১ একর ৪৫ শতাংশ সরকারি খাসজমি রয়েছে। খালটির একটি অংশসহ ওই জমি বালু দিয়ে ভরাট করা হচ্ছে। সেখানে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণ করা হবে।
কাজিয়ারচর এলাকার বাসিন্দা আবদুল হাই সরদার বলেন, এ খালের পানি কৃষিজমিতে নেওয়া হয়। আবার বর্ষায় কৃষিজমিতে জমে যাওয়া পানি পদ্মা নদীতে নেমে যায়। খালটির মাধ্যমে জমির সঙ্গে নদীর সংযোগ থাকায় প্রতিবছর জমিতে নতুন পলি জমে। জমি উর্বর হয়, ফসল উৎপাদন ভালো হয়। খালটি বন্ধ করে দেওয়া হলে কৃষকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কাজিয়ারচর বাজারের এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘পদ্মা নদী থেকে বালু তুলে খালটি ভরাট করা হচ্ছে। নদী থেকে প্রবহমান খালটি বন্ধ করলে কৃষকের সঙ্গে আমরাও ক্ষতিগ্রস্ত হব। বর্ষা মৌসুমে আশপাশ পানিতে তলিয়ে যায়। তখন এ খাল দিয়ে নৌকা ও ট্রলারে যাতায়াত করা যায়। প্রশাসনের লোকজন ভরাট করছেন। তাঁদের বাধা দেওয়ার ক্ষমতা তো আমাদের নেই, তাই চুপচাপ আছি।’
এ ব্যাপারে বিলাসপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবদুল কুদ্দুস ব্যাপারী বলেন, ‘বিলাসপুরের কোথায় খাসজমি উদ্ধার করে আশ্রয়ণ প্রকল্প করা হচ্ছে, তা আমাদের জানানো হয়নি। কাজিয়ারচর এলাকায় একটি খাল রয়েছে। নকশা অনুযায়ী খালটির অবস্থান কোথায়, তা আমার জানা নেই। তবে খালটি ভরাট করা ঠিক হবে না।’
জানতে চাইলে জাজিরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কামরুল হাসান সোহেল গত বুধবার বলেন, খালের পাশে যে সড়ক রয়েছে, নকশা অনুযায়ী সেটি খালের জায়গা। আর খালের জায়গাটি খাস। ওই এলাকা নদীভাঙনপ্রবণ এলাকা। সেখানে খাল থাকলে ভাঙনের ভয় থাকে। এসব বিবেচনায় খালের কিছু অংশ ভরাট করে খাসজমি উদ্ধার করা হচ্ছে। ওই খাসজমিতে পরে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণ করা হবে। ওই অংশ ভরাট করা না হলে ভবিষ্যতে আশ্রয়ণ প্রকল্পের স্থাপনা খালে ভেঙে পড়তে পারে। খালের কিছু অংশ ভরাটের কারণে তেমন কোনো অসুবিধা হবে না।