
শরীয়তপুরের জাজিরায় আধিপত্য বিস্তারের দ্বন্দ্বে স্থানীয় দুটি পক্ষ দফায় দফায় সংঘর্ষে জড়িয়েছে।
এ সময় ব্যাপকভাবে বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়; বাড়িঘরে ভাংচুর চালানো হয়। বোমার আঘাতে একজনের হাত উড়ে গেছে।
বুধবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত উপজেলার দূর্বাডাঙ্গা ও বিলাসপুরে দফায় দফায় এ সংঘর্ষ হয়।
বিলাসপুর ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান আব্দুল কুদ্দুস বেপারী এবং গত নির্বাচনে পরাজিত চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী আব্দুল জলিল মাদবরের সমর্থকদের মধ্যে এ সংঘর্ষ হয়।
ঘটনার পর পুলিশ ছয় ছয়জনকে আটক করেছে জাজিরা থানার ওসি জানিয়েছেন।
আহতদের মধ্যে মেহের আলী মাদবর কান্দির সুলতান মাদবরের ছেলে সুজন মাদবরের (২৫) ডান হাতের কবজি বোমের আঘাতে উড়ে গেছে। এ ছাড়া তার বাম হাতসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে বোমার আঘাত হয়েছে।
আহত অন্যরা হলেন একই গ্রামের আব্দুল খালেক মাদবরের ছেলে রাসেল মাদবর (২৮), মুলাই বেপারী কান্দির আব্দুর রশিদ খার ছেলে খোকন খা (৩৮), সারেং কান্দির আব্দুর রহমান সারেংয়ের ছেলে তোতা মিয়া সারেং (৩৮)। এ তিনজনের শরীরের বিভিন্ন অংশে বোমার আঘাত হয়েছে।
আরও আহত হন রাসেল মাদবর (৪৮), খোকন বেপারী, (৫৯), ফারুক বেপারী (৬০), রনি বেপারী (৫৫), বাবুল সরদার (৫৪) ও হালিমা (৪৩)।
স্থানীয়রা জানান, স্থানীয় দুটি গ্রুপের মধ্যে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সম্প্রতি কয়েক দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। ওই ঘটনায় একাধিক মামলাও হয়।
এর ধারাবাহিকতায় বুধবার সকালে একটি পক্ষ আরেকপক্ষর উপর হামলা করে। এররপ দুদলের সংঘর্য শুরু হয়। চার ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্যে ব্যাপক বোমার বিস্ফোরণ ঘটে। পুরো এলাকা প্রকম্পিত হয়ে ওঠে। এ সময় মানুষের মধ্যে আতংক ছড়িয়ে পড়ে।
এ সময় সংরক্ষিত নারী সদস্য মেহের আলী মাদবর কান্দির ফরিদা বেগমের বাড়িসহ সারেং কান্দি, চেরাগ আলী বেপারী কান্দি এবং মুলাই বেপারী কান্দির অর্ধশতাধিক বাড়িঘর ভাংচুর ও লুটপাটের খবর জানায় স্থানীয়রা।
নাম না প্রকাশ করা শর্তে স্থানীয় একটি মসজিদের ইমাম বলেন, গত দুই সপ্তাহ ধরে দুটি পক্ষের লোকজন বাড়ি ভাংচুর, লুটপাটসহ ব্যাপক বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে। এলাকা প্রকম্পিত হয়ে উঠেছে। এতে সাধারণ মানুষ এলাকা ছেড়ে পালাচ্ছে।
জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার কবির আলম জানান, সকাল থেকেই বিলাসপুরে সংঘর্ষে আহত কয়েকজন রোগী তাদের কাছে চিকিৎসা নিতে গেলে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়েছেন। পরে তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেন।
এ ছাড়া অন্য আহতদের জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয় এবং কয়েকজনকে ভর্তি করা হয়।
জাজিরা থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান জানান, সকালে সংঘর্ষ বাধার পরেই পুলিশ, র্যাব এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে যান। আপাতত এলাকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
“কিছু বাড়িঘর ভাংচুর হয়েছে। আজকে [বুধবার] বেশি বোমা বিস্ফোরণ ঘটায়নি। এর আগের সংঘর্ষগুলোয় অনেক বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়েছিল।”
এছাড়া ছয় জনকে সন্দেহভাজন হিসেবে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয় বলেও ওসি জানান।
আটকরা হলেন তোতা মিয়া, আনোয়ার হোসেন মাদবর, সাব্বির মাদবর, আজগর মাদবরসহ ছয় জন।
কয়েকটি জায়গায় অভিযান চালিয়ে জাজিরা থানা পুলিশ বোমা বানানোর সরঞ্জাম এবং তৈরি হাতবোমাও উদ্ধার করেছে বলেও তিনি জানান।
জাজিরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. কামরুল হাসান সোহেল বলেন, “আমরা বিলাসপুরের শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার্থে যৌথভাবে টহল দিয়ে যাচ্ছি। আপাতত এলাকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। যেকোনো প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য আমরা প্রস্তুত রয়েছি।”
এ ব্যাপারে কথা বলতে বিলাসপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল কুদ্দুস বেপারী এবং গত নির্বাচনে পরাজিত চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী আব্দুল জলিল মাদবরের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে পাওয়া যায়নি।