
পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম এমপি শরীয়তপুরের নড়িয়ার নওপাড়ায় পদ্মা নদীর এ সঞ্চালন লাইনের উদ্বোধন করেন। আজ শুক্রবার সকালে সংসদ সদস্য ও পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক নড়িয়ার নওপাড়ায় পদ্মা নদীর এ সঞ্চালন লাইনের উদ্বোধন করেন।
পদ্মা নদীর ওপর দিয়ে সঞ্চালন লাইনের মাধ্যমে চরাঞ্চলে বিদ্যুৎ–সংযোগ দেওয়া হয়েছে। এতে শরীয়তপুর ও চাঁদপুর জেলার ৫৭টি গ্রামের ১২ হাজর ৫৫৩টি পরিবার বিদ্যুৎ–সংযোগ পেয়েছে। আজ শুক্রবার স্থানীয় সংসদ সদস্য ও পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক নড়িয়ার নওপাড়ায় পদ্মা নদীর ওই সঞ্চালন লাইনের উদ্বোধন করেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক মো: পারভেজ হাসান, পুলিশ সুপার সাইফুল হক, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী লতিফ সরদার, মুন্সিগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মহাব্যবস্থাপক শেখ মোহাম্মদ আলী, শরীয়তপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মহাব্যবস্থাপক জুলফিকার রহমান প্রমুখ।
শরীয়তপুর ও মুন্সিগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি সূত্রে জানা গেছে, শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার চরআত্রা, নওপাড়া, জাজিরার কুন্ডেরচর, ভেদরগঞ্জের কাচিকাটা এবং চাঁদপুর সদর উপজেলার রাজরাজেশ্বর, মতলবের একলাশপুর ও জহিরাবাদ ইউনিয়ন পদ্মা নদীর চরে অবস্থিত। ওই ইউনিয়নগুলোর ৫৭টি গ্রামে জনবসতি আছে। গ্রামগুলোয় যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম নৌপথ। চরগুলোতে কোনো সংযোগ সড়ক না থাকায় সেখানে বিদ্যুতের সংযোগও ছিল না। দীর্ঘ উত্তাল নদী পেরিয়ে বিদ্যুৎ–সংযোগ স্থাপন করা ছিল দুরূহ কাজ।
তবে ২০১৯ সালে শরীয়তপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য এ কে এম এনামুল হক চরাঞ্চলে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ নেন। পদ্মা নদীর তলদেশ দিয়ে দেড় কিলোমিটার সাবমেরিন কেব্লের মাধ্যমে প্রথমে বিদ্যুৎ নেওয়া হয় নড়িয়ার নওপাড়া ও চরআত্রা ইউনিয়নে। তবে পরে নওপাড়ায় ১০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন একটি বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র নির্মাণ করা হয়। ওই উপকেন্দ্র থেকে ৫৭টি গ্রামে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে। গ্রামগুলোয় বিদ্যুৎ পৌঁছে দিতে চরাঞ্চলে ২৭৮ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন স্থাপন করা হয়েছে। আর নড়িয়ার নওপাড়া ও মুন্সিগঞ্জের দীঘিরপাড় এলাকায় পদ্মা নদীর ওপর ৮টি পুলের (খুঁটি) মাধ্যমে দেড় কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন দিয়ে চরাঞ্চলে বিদ্যুৎ আনা হয়েছে। ওই সঞ্চালন লাইন দিয়ে ৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আনা যাবে। বর্তমানে চরের সাড়ে ১২ হাজার গ্রাহকের ১ দশমিক ৫২ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে।
মুন্সিগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মহাব্যবস্থাপক শেখ মোহাম্মদ আলী বলেন, ২০২০ সালে সাবমেরিন কেব্লের মাধ্যমে চরাঞ্চলে বিদ্যুৎ আনা হয়। তবে নদীভাঙন ও বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিদ্যুতের বিপর্যয় দেখা দিতে পারে। তাই এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য স্থায়ীভাবে নদীর ওপর সঞ্চালন লাইন স্থাপন করা হয়েছে, যেন চরের বাসিন্দারা নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ পান। বিদ্যুৎ–সংযোগকে কেন্দ্র করে চরে কৃষিভিত্তিক শিল্পাঞ্চল গড়ে ওঠার সম্ভবনা আছে। ইতিমধ্যে শিল্পপ্রতিষ্ঠানের জন্য ১২টি সংযোগও নেওয়া হয়েছে।
নওপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য দাদন ব্যাপারী বিদ্যুতের সাহায্যে বোরো ধানের জমিতে সেচ দিচ্ছেন। বাজারে ধান, গম, শর্ষে ও হলুদ প্রক্রিয়াজাতকরণের কারখানা স্থাপন করেছেন তিনি। দাদন ব্যাপারী বলেন, ‘আমাদের অঞ্চলে কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাত করার কোনো ব্যবস্থা ছিল না। নদী পারাপার হয়ে ধান-গম প্রক্রিয়া করা হতো। আর শর্ষে ও হলুদের জন্য শহরে যেতে হতো। এখন চরেই বিদ্যুৎ এসে গেছে। এতে আমরা অনেক লাভবান হব।’
শরীয়তপুর ২ আসনের সংসদ সদস্য এনামুল হক শামীম বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিটি ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছেন। এরই ধারাবাহিতকায় চরাঞ্চলগুলো বিদ্যুৎ–সংযোগের আওতায় আনা হচ্ছে। চরাঞ্চল কৃষি ও মৎসভিত্তিক শিল্পখাতের জন্য সম্ভাবনার জায়গা। কৃষি ও মৎস প্রক্রিয়াজাত শিল্প গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়ে বিদ্যুতের সঞ্চালন লাইন ও উপকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। এখানে অর্থনৈতিক অঞ্চল করার কাজ চলছে। এখন বিদ্যুৎ–সংযোগও এসে গেছে। এতে অবহেলিত এ জনপদ আশীর্বাদে রূপ নিয়েছে।