বৃহস্পতিবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০২৩, ২২ অগ্রহায়ণ, ১৪৩০, ২২ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৫

চার বছরেও তালা খোলেনি যে স্কুলের

 

ঈশ্বরদী উপজেলার কয়েকটি গ্রামে প্রায় ৫ হাজার আদিবাসী সম্প্রদায়ের বসবাস। এতে আছে ৭টি সম্প্রদায়। দুঃখজনক হলেও সত্য আধুনিকতার এই সময়েও প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা সুবিধার অভাবে বঞ্চিত হচ্ছে আদিবাসী শিশুরা। তাদের একটি মাত্র স্কুল, সেটিও চার বছরের বেশি সময় ধরে বন্ধ হয়ে আছে।

আদিবাসীদের মধ্যে ঈশ্বরদী উপজেলার দাশুড়িয়া ইউনিয়নের মারমী গ্রামে মাল পাহাড়িয়া ও মুলাডুলির পতিরাজপুর গ্রামে বাগদি সম্প্রদায় বেশি বসবাস করে। এই দুই আদিবাসী পল্লীর শিশুদের জন্য নিজস্ব কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নেই। প্রায় এক থেকে দেড় কিলোমিটার পায়ে হেঁটে শিশুদের পার্শ্ববর্তী গ্রামের স্কুলে যেতে হয়। দূরের পথ পাড়ি দিয়ে অনেক শিশু স্কুলে যেতে চায় না। ফলে শিক্ষাবিমুখ হয়ে পড়ছে অনেক শিশু।

সবচেয়ে বড় আদিবাসী পল্লী মারমীতে খ্রিস্টান মিশন পরিচালিত একমাত্র শিশু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ‘সেন্ট ফিলিপস শিশু শিক্ষাকেন্দ্রটি ১৯৩২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। কিন্তু এটি ২০১৮ সালে বন্ধ হয়ে যায়। এই শিশু শিক্ষাকেন্দ্রটির অবকাঠামো এখনো আছে। কিন্তু শিশুদের কোনো প্রাণচাঞ্চল্য নেই।

পল্লীর বাসিন্দারা জানান, স্কুলটিতে অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী ছিল। শুরুতে খ্রিস্টান মিশন এটি পরিচালনা করলেও পরে কারিতাস নামে একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা এর দায়িত্ব নেয়। কিন্তু অর্থাভাবে তারাও ২০১৮ সালে শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। আদিবাসী পল্লীর শিশুদের অনেকেই এখন আর স্কুলে যায় না, তারা বাবা-মায়ের সঙ্গে মাঠে কাজ করে। পায়ে হেঁটে এক-দেড় কিলোমিটার দূরের স্কুলে গেলেও তাদের কষ্টের শেষ নেই।

মারমী গ্রামের আদিবাসী শিক্ষার্থী সেজুতি বিশ্বাস বলেন, সেন্ট ফিলিপস শিশু শিক্ষাকেন্দ্রে আমি শিশু শ্রেণিতে পড়েছি। সেই সময়ই স্কুলটি বন্ধ হয়ে যায়। আমার ছোট ভাইবোনরা এক থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে পাশের গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছে। আমাদের গ্রামের স্কুলটি চালু করা হলে শিশু শিক্ষার্থীরা এখানে পড়াশোনা করতে পারতো। অনেক শিশু দূরের স্কুলে যেতে চায় না। ধীরে ধীরে অনেকেই পড়াশোনা বাদ দিয়ে মা-বাবার সঙ্গে কৃষিকাজে যাচ্ছে।

মারমীর বন্ধ হয়ে যাওয়া সেন্ট ফিলিপস শিশু শিক্ষাকেন্দ্রটির শিক্ষিকা আগনেশ মাধবী বিশ্বাস শরীয়তপুর চোখকে বলেন, অর্থের অভাবে আমাদের একমাত্র শিশু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি বন্ধ হয়ে গেছে। এ প্রতিষ্ঠানটি চালু করতে সরকারি-বেসরকারি কোনো প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা এগিয়ে আসেনি।

মারমী আদিবাসী পল্লীর প্রধান বার্নাট বিশ্বাস শরীয়তপুর চোখ কে বলেন, স্কুল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আমাদের শিশুদের খ্রিস্টান ধর্ম ও নিজস্ব ভাষায় শিক্ষা বন্ধ হয়ে গেছে। পাশের গ্রামের স্কুলে শিশুরা পড়াশোনা করতে যায়, সেখানে আমাদের ধর্ম, ভাষা সম্পর্কে শিক্ষার কোনো সুযোগ নেই। নিজেদের ভাষা, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য ধরে রাখতে এ স্কুলটি পুনরায় চালু করা প্রয়োজন।

দাশুড়িয়া ইউপি সদস্য রফিকুল ইসলাম মাঝি বলেন, মারমী আদিবাসী পল্লীর শিশু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এ পল্লীর শিশুদের পড়াশোনা খুবই কষ্টকর হয়ে পড়েছে।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আসাদুজ্জামান শরীয়তপুর চোখকে বলেন, আমি যোগদানের পর আদিবাসী পল্লীর শিশু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিষয়টি এখন পর্যন্ত কেউ কিছু জানায়নি। এই প্রথম শুনলাম, এখানে একটি শিশু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছিল। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কেন বন্ধ রয়েছে বিস্তারিত খবর নিয়ে জানার চেষ্টা করব।