
গাজীপুরে বিয়ের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় কলেজছাত্রীকে কুপিয়ে হত্যা এবং তার মা ও এক বোনকে আহত করে পালিয়ে গেছে মসজিদের ইমাম। সোমবার রাতে গাজীপুর মহানগরীর দক্ষিণ সালনা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত কলেজছাত্রী রাবেয়া আক্তার দক্ষিণ সালনা এলাকার আবদুর রউফের মেয়ে। এ ঘটনায় আহত ওই কলেজছাত্রীর মা বিলকিস বেগম ও ছোট বোন খাদিজাকে গুরুতর আহতাবস্থায় ঢাকার একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
গাজীপুর সদর মেট্রো থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জিয়াউল হক জানান, দক্ষিণ সালনা এলাকার আবদুর রউফ তার স্ত্রী, চার মেয়ে-রাবেয়া আক্তার, হাবিবা, খাদিজা, জান্নাত ও এক ছেলে নিয়ে বসবাস করেন। তিনি সালনা বাজারে আরএফএল প্লাস্টিক শোরুমে চাকরি করেন। তার বড় মেয়ে রাবেয়া আক্তার ২০২০ সালে জয়দেবপুর সরকারি মহিলা কলেজ থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়। তিনি স্টুডেন্ট ভিসায় ইউরোপে যাওয়ার উদ্দেশে ভিসাসহ আনুষঙ্গিক কার্যক্রম প্রসেসিং করতে থাকেন। তার ছোট দুই মেয়ে খাদিজা ও জান্নাতকে কোরআন শিক্ষার জন্য টেকিবাড়ী জামে মসজিদের ইমাম মো. সাইদুল ইসলামকে দায়িত্ব দেন। দুই মেয়েকে পড়ানোর জন্য বাসায় যাওয়া-আসার সুবাদে তার বড় মেয়ে রাবেয়া আক্তারের দিকে নজর পড়ে ইমাম সাইদুল ইসলামের। রাবেয়া আক্তারকে বিয়ের প্রস্তাব দিলে রাবেয়ার পরিবার সরাসরি ওই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে। এতে ক্ষুব্ধ হন সাইদুল। ওই পরিবার থেকে তাকে বাসায় এসে পড়ানোর জন্য নিষেধ করা হয়। এতে তিনি আরও বেশি ক্ষিপ্ত হয়ে রাবেয়ার কলেজে ও বাইরে যাওয়া-আসার পথে উত্ত্যক্ত করতেন ইমাম। বিয়েতে রাজি না হলে রাবেয়াকে প্রাণনাশের হুমকিও দেন।
সাইদুল সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় রাবেয়া আক্তারের বাড়িতে যান। এরপর রাবেয়ার কক্ষে ঢুকে ছুরি দিয়ে রাবেয়ার মাথায়, গলায়, হাতে, পায়ে কোপাতে থাকেন। রাবেয়ার চিৎকারে তার মা, ছোট বোন হাবিবা ও খাদিজা দৌড়ে এলে তাদেরও কোপাতে থাকেন সাইদুল। এরপর পালিয়ে যান সাইদুল। পরে তাদের চিৎকারে লোকজন এগিয়ে এসে তাদের শহিদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। রাত সাড়ে ৮টার দিকে রাবেয়া ওই হাসপাতালে মারা যান। গুরুতর আহত মা ও ছোট বোনকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় রাবেয়ার বাবা বাদী হয়ে সাইদুলকে আসামি করে মঙ্গলবার সদর থানায় মামলা করেন। আসামি ধরতে পুলিশের অভিযান পরিচালনা অব্যাহত আছে বলে জানিয়েছেন সদর মেট্রো থানার ওসি মো. জিয়াউল হক।
রাবেয়া আক্তারের বাবা আব্দুর রউফ বলেন, সাইদুল কুরআনে হাফেজ। করোনার সময় আমার চার মেয়ের স্কুল বন্ধ ছিল। স্কুল বন্ধ থাকায় আমার ছোট মেয়েদের আরবি পড়াতে সাইদুলকে দিয়েছিলাম। আমার বড় মেয়ে রাবেয়া বিজ্ঞানের ছাত্রী। সে এইচএসসিতে গোল্ডেন এ প্লাস পেয়েছিল। ইচ্ছা ছিল সে ডাক্তারি পড়বে। ইতালি, ইংল্যান্ড থেকে স্কলারশিপের জন্য অফার ছিল। রাবেয়ার মামা ইতালিতে থাকায় স্কলারশিপের জন্য সব কাগজপত্র তৈরি করা হয়েছিল। টাকা-পয়সাও জোগাড় করেছিলাম। কিছুদিনের মধ্যে সে চলে যেত। কিন্তু এ সময়ই আমার মেয়ের দিকে সাইদুলের চোখ পড়ে। তার বড় ভাইকে দিয়ে বিয়ের প্রস্তাবও দেয়। কিন্তু আমার মেয়ে ডাক্তারি পড়তে বিদেশে যাবে। আমরা সাইদুলকে সুন্দর করে বুঝিয়ে বলি। কিন্তু সে আমার মেয়েকে বড় ছুরি দিয়ে কুপিয়ে শেষ করে দিল। আমার স্ত্রী উত্তরা জাপান হাসপাতালে আইসিইউতে আছে। রাবেয়ার লাশ ফ্রিজিং গাড়িতে রাখা হয়েছে। বুধবার (আজ) তার লাশ গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার হোমনা উপজেলার চরগাঁওয়ে নিয়ে দাফন করব।