
শরীয়তপুর সদর উপজেলার রুদ্রকর এলাকায় ১৫০ ফুট উঁচু একটি মঠ রয়েছে। ৩৫৩ বছরের পুরোনো ওই মঠ কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। পর্যটকেরা মঠটি দেখতে আসেন। কিন্তু মঠের কাছে যাওয়ার কোনো রাস্তা নেই। সংস্কারের অভাবে মঠটির বিভিন্ন স্থানে ভেঙে যাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে এলাকাবাসী মঠে যাওয়ার জন্য রাস্তা নির্মাণ এবং মঠটি সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন।
১৬৭০ সালের দিকে মঠটি নির্মাণ করা হয়। মঠটি ইট ও পাথর দিয়ে নির্মাণ করা হয়। পালং এলাকার রাজমিস্ত্রি তিলক ভূঁইয়া ও গুরুচরণ ভূঁইয়া দীর্ঘদিন ধরে এটি নির্মাণ করেন।
শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, শরীয়তপুর সদর উপজেলার রুদ্রকর এলাকায় ষোলো শতকের দিকে বাস করতেন নীলমনি চক্রবর্তী নামের এক জমিদার। তাঁর মৃত্যুর পর ১৬৭০ সালের দিকে তাঁর তিন সন্তান বানিলাল চক্রবর্তী, ক্ষিতিলাল চক্রবর্তী ও বসন্তলাল চক্রবর্তী বাবার স্মৃতির প্রতি সম্মান দেখিয়ে সমাধির ওপর একটি মঠ নির্মাণ করেন। মঠটি ইট ও পাথর দিয়ে নির্মাণ করা হয়। পালং এলাকার রাজমিস্ত্রি তিলক ভূঁইয়া ও গুরুচরণ ভূঁইয়া দীর্ঘদিন ধরে এটি নির্মাণ করেন।
প্রাচীন ওই মঠের কিছু অংশ নষ্ট হয়ে গেলে ১৮৮৯ সালে চক্রবর্তী পরিবারের সন্তান গুরুচরণ চক্রবর্তী এটি পুনর্নির্মাণ করেন। পরে মঠটিতে কালীমন্দির স্থাপন করে পূজা-অর্চনা করা হতো। ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত মঠটির কালীমন্দিরে জাঁকজমকপূর্ণভাবে কালীপূজা হতো। ওই মঠের পাশের ৩ একর ৭৩ শতাংশ জমির ওপর চক্রবর্তী পরিবার থেকে ১৯১৫ সালে জমিদার নীলমনির নামে একটি উচ্চবিদ্যালয় স্থাপন করা হয়। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় মঠটি ধ্বংস করার জন্য পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সদস্যরা মর্টার শেল নিক্ষেপ করে। এতে মঠটির কিছু অংশ ধ্বংস হয়ে যায়। ১৯৭৫ সালে নীলমনি চক্রবর্তীর বংশের বাংলাদেশে বসবাসকারী সর্বশেষ সদস্য প্রমথ লাল চক্রবর্তী ভারত চলে যান। এর পর থেকে সেখানে পূজা হয় না। সংরক্ষণের অভাবে ঐতিহ্যবাহী মঠটি এখন ধ্বংস হতে চলেছে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষ মঠটি দেখতে রুদ্রকরে আসছেন।
শরীয়তপুর-চাঁদপুর সড়কের পাশে সদর উপজেলার রুদ্রকর এলাকা। সড়কের উত্তর দিকে গ্রামের ভেতর মঠটির অবস্থান। মঠের কাছে যেতে কোনো রাস্তা নেই। মানুষের বাড়ির ওপর দিয়ে মঠের কাছে যেতে হয়।
সম্প্রতি সরেজমিন দেখা যায়, শরীয়তপুর-চাঁদপুর সড়কের পাশে সদর উপজেলার রুদ্রকর এলাকা। সড়কের উত্তর দিকে গ্রামের ভেতর মঠটির অবস্থান। মঠের কাছে যেতে কোনো রাস্তা নেই। মানুষের বাড়ির ওপর দিয়ে মঠের কাছে যেতে হয়। প্রাচীন ওই স্থাপনা দেখতে বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষ রুদ্রকর এলাকায় আসেন।
শরীয়তপুর রথীন্দ্র সাহিত্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শ্যাম সুন্দর দেবনাথ বলেন, ‘আমাদের জেলায় প্রাচীন ঐতিহ্যসংবলিত স্থাপনাগুলো সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয় না। ৩৫৩ বছরের পুরোনো রুদ্রকর মঠটি এ অঞ্চলের একটি বড় প্রাচীনতম স্থাপনা। এটি দেখতে অনেক পর্যটক আসেন। মঠের কাছে যাওয়ার কোনো রাস্তা নেই। তাই যাতায়াতে অনেক সমস্যা সৃষ্টি হয় পর্যটকদের। আমাদের দাবি, প্রাচীন ওই মঠ সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হোক।’
রুদ্রকর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘রুদ্রকর মঠটি একটি ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা। সংরক্ষণের অভাবে এটি ধংস হওয়ার পথে। এটি সংস্কার করার জন্য স্থানীয় প্রশাসনকে অনুরোধ করেছি।’
রুদ্রকর নীলমনি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘এ অঞ্চলের জমিদার নীলমনি চক্রবর্তীর পরিবার তাঁর নামে একটি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছে। এ অঞ্চলের মানুষকে আলোকিত করতে অনেক অবদান রেখেছে। তার স্মৃতির প্রতি সম্মান দেখাতে নির্মাণ করা মঠটি আজ অযত্নে-অবহেলায় নষ্ট হতে বসেছে। আমাদের সবার উচিত মঠটি সংস্কার করে তা টিকিয়ে রাখার জন্য উদ্যোগ নেওয়া।’
জানতে চাইলে শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক পারভেজ হাসান বলেন, ‘রুদ্রকর মঠটি জেলার একটি অন্যতম প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। এটির সংস্কার স্থানীয় প্রশাসন করতে পারে না। আমরা সংস্কারের জন্য প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরে চিঠি দেব। আর মঠের কাছে যাতায়াতের রাস্তা নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হবে। এটা যাতে দেখতে আরও বেশি পর্যটক আসেন, সে উদ্যোগও নেওয়া হবে।’