শনিবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০২৩, ২৪ অগ্রহায়ণ, ১৪৩০, ২৪ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৫

শরীয়তপুর বাস টার্মিনাল নেই বাস রাখার স্থান, যাত্রীদের দুর্ভোগ

শরীয়তপুর জেলা শহরের পৌর বাস টার্মিনালটি অত্যন্ত ছোট। টার্মিনালে বাস রাখার স্থানও নেই। এমন পরিস্থিতিতে সড়কের ওপর বাস রেখে যাত্রী ওঠানো–নামানো হয়। টার্মিনালে নেই যাত্রীছাউনি। এতে বিড়ম্বনায় পড়ছেন যাত্রীরা। ঝড়-বৃষ্টি ও রোদে কষ্ট করে বাসের জন্য অপেক্ষা করতে হয় যাত্রীদের।

শরীয়তপুর আন্তজেলা বাস ও মিনিবাস মালিক সমিতি সূত্র জানায়, নব্বইয়ের দশকে শরীয়তপুর জেলার মধ্যে স্বল্প পরিসরে বাস চলাচল শুরু হয়। তখন কোনো বাস টার্মিনাল ছিল না। সড়কের পাশে, সড়কের ওপর বাস রেখে যাত্রী ওঠানো–নামানো হতো। ওই সময়ের বাসমালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফারুক আহম্মেদ তালুকদার ও তাঁর ভাই ফরিদ আহম্মেদ তালুকদার বাস টার্মিনাল নির্মাণের জন্য বাঘিয়া ও চরপালং এলাকায় শরীয়তপুর পৌরসভাকে এক একর জমি দান করেন। ১৯৯৮ সালে পৌর কর্তৃপক্ষ সেই জমিতে বাস টার্মিনাল নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। এরপর ২০১০ সালে সেখানে একটি ভবন নির্মাণ করে পৌরসভা। কিন্তু সেখানে গণশৌচাগার নেই। ওই ভবনের পেছনের একটি অংশে মেরামতের উদ্দেশ্যে অকেজো বাস রাখেন শ্রমিকেরা। আরেকটি অংশে জেলার ভেতর চলাচলকারী লোকাল বাস রাখা হয়।

গত বছরের ২৫ জুন পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর বাস টার্মিনালে চাপ বৃদ্ধি পায়। ২৫০টি বাস জেলা শহরের এ টার্মিনাল থেকে ঢাকায় চলাচল করে। এ ছাড়া এ টার্মিনাল থেকে জেলার সব উপজেলা, মাদারীপুর, ফরিদপুর, খুলনা, বেনাপোল ও সাতক্ষীরায় বাস চলাচল করে। শরীয়তপুরের বাইরে মাদারীপুর, বরিশাল ও চাঁদপুরের কিছু এলাকার মানুষ এ বাস টার্মিনাল ব্যবহার করে যাতায়াত করছেন। প্রতিদিন অন্তত ২০ হাজার যাত্রী ওই টার্মিনাল দিয়ে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় যাতায়াত করেন।

এক একর জমিতে নির্মাণ করা বাস টার্মিনালে ৩০-৪০টি বাস রাখার ধারণ ক্ষমতা রয়েছে। অন্য বাসগুলো শহরের আনসার ও ভিডিপি জেলা কার্যালয়ে সামনের থেকে প্রেমতলা পর্যন্ত দুই কিলোমিটার সড়কের দুই পাশে রাখা হয়। এ সড়কটির ওপরে বাস রেখে যাত্রী ওঠানো–নামানো হচ্ছে। এতে দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে।

শরীয়তপুরের গোসাইরহাট উপজেলার নাগেরপাড়া গ্রামের মিজানুর রহমান ঢাকায় একটি বেসরকারি কোম্পানিতে কাজ করেন। প্রায়ই তিনি ঢাকা থেকে গ্রামে যাতায়াত করেন। মিজানুর রহমান বলেন, শহরের বাস টার্মিনালটি দিয়ে প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষ ঢাকায় যাতায়াত করেন। যাত্রীছাউনি ও গণশৌচাগার না থাকার কারণে অনেক কষ্ট হয়। বেশি ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে নারী ও শিশু যাত্রীদের।

ডামুড্যা উপজেলার তিলই এলাকার মামুন খানকে ব্যবসার কাজে প্রতি সপ্তাহে দুই দফা ঢাকায় যাতায়াত করতে হয়। মামুন খান বলেন, ‘ঢাকায় যাওয়ার বাসের জন্য সড়কের ওপর দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। সড়কটি অত্যন্ত সরু। সব সময় যানবাহনের চাপ থাকে। এমন পরিস্থিতিতে দুর্ঘটনার ঝুঁকি থাকে। টার্মিনাল থেকে বাস ছাড়লে আমাদের এমন ভোগান্তি হতো না।’

ঢাকা-শরীয়তপুর সড়কের শরীয়তপুর সুপার সার্ভিস বাসের চালক মোবারক হোসেন বলেন, ‘টার্মিনালটি ছোট। আমরা বাস রাখতে পারছি না। নিজ দায়িত্বে সড়কের ওপর ও সড়কের পাশে বাস দাঁড় করিয়ে যাত্রী ওঠানো–নামানো করতে হচ্ছে।’

শরীয়তপুর আন্তজেলা বাস ও মিনিবাস মালিক সমিতির সভাপতি ফারুক আহম্মেদ তালুকদার বলেন, ‘আমাদের দেওয়া জমিতে ছোট একটি বাস টার্মিনাল নির্মাণ করা হয়েছে। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর পরিবহন ব্যবসা অনেক সম্প্রসারিত হয়েছে। ওই টার্মিনালে স্থান সংকুলান হচ্ছে না। বড় টার্মিনাল নির্মাণ করার জন্য অনেকবার পৌরসভাকে অনুরোধ করেছি। কিন্তু কোনো সাড়া পাচ্ছি না।’

জানতে চাইলে শরীয়তপুর পৌরসভার মেয়র পারভেজ রহমান বলেন, শহরের বাইরে পৌর এলাকার মধ্যে বাস টার্মিনালটি সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। জমি কেনার তহবিল নেই। জমির ব্যবস্থা হলে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের প্রকল্পে বড় টার্মিনাল নির্মাণ করা যাবে।