বুধবার, ৬ ডিসেম্বর, ২০২৩, ২১ অগ্রহায়ণ, ১৪৩০, ২১ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৫

শরীয়তপুরের নড়িয়ায় বিদ্যালয় ভবনে পুলিশ ফাঁড়ি

 

বিদ্যালয়ে এসে পাঠদানে মনোযোগ দেওয়ার কথা শিক্ষার্থীদের। পাঠদানের আগে বা পরে খেলাধুলায় মেতে ওঠার কথা তাদের। কিন্তু পাঠদান বা খেলাধুলার কোনোটাই তারা স্বাচ্ছন্দ্যে করতে পারছে না। কারণ, তাদের বিদ্যালয়ের ভবনের দোতলায় পুলিশের ফাঁড়ি। অপরাধীদের আনা–নেওয়াসহ থানার কার্যক্রম চলায় কোমলমতি শিক্ষার্থীরা ভীতসন্ত্রস্ত থাকে। প্রায় ২০ বছর ধরে এভাবে চলছে শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার উত্তর হালইসার গোয়ালবাথান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম।

শরীয়তপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, ১৯৯১ সালে শরীয়তপুরে নড়িয়া উপজেলার হালইসার এলাকায় হালইসার গোয়ালবাথান প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করা হয়। প্রথম দিকে একটি টিনশেডের ঘরে বিদ্যালয়ের কার্যক্রম চলত। সরকারি একটি প্রকল্পের আওতায় ২০০২ সালে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) বিদ্যালয় কাম বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহারের জন্য দ্বিতল একটি ভবন নির্মাণ করে। ভবনের প্রতি তলায় চারটি করে কক্ষ নির্মাণ করা হয়।

পদ্মা নদীর তীরে সুরেশ্বর বাজারে সুরেশ্বর নৌপুলিশ ফাঁড়ি ছিল। ২০০২ সালে পদ্মার ভাঙনে ফাঁড়ি বিলীন হয়ে যায়। এরপর ২০০৩ সালে ওই বাজার থেকে দেড় কিলোমিটার দূরের হালইসার গোয়ালবাথান প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয়তলার চারটি কক্ষে পুলিশ ফাঁড়ির কার্যক্রম সরিয়ে আনা হয়।

বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা জানান, বর্তমানে বিদ্যালয়ে ১৪৯ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। প্রাক্‌–প্রাথমিক শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদান দিতে চারটি শ্রেণিকক্ষ, শিক্ষকদের জন্য একটি কক্ষ, প্রধান শিক্ষকের জন্য একটি কক্ষ ও একটি ভান্ডারকক্ষ প্রয়োজন। কিন্তু বিদ্যালয়ের দোতলাটি নৌ-পুলিশের দখলে থাকায় নিচতলার চারটি কক্ষে সব কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। নৌ পুলিশ যখন অভিযান চালায়, তখন একসঙ্গে অনেক আসামি ধরে আনেন। তাঁদের বিদ্যালয়ের বারান্দায় রাখা হয়। অনেক সময় বিদ্যালয়ের বারান্দায় অনেক আসামিকে বেঁধে রাখা হয়। আসামিদের চিৎকার-চেঁচামেচিতে শিশুরা ভয় পায়। তখন শ্রেণিকক্ষের দরজা-জানালা বন্ধ করে পাঠদান করাতে হয়।

বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক জামসেদ আলী বলেন, পুলিশের কাজ অপরাধীদের নিয়ে। অপরাধী ধরে আনার সময় খারাপ আচরণ করা হয়। যা দেখে শিশুরা ভয় পায়। এতে বাচ্চাদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব পড়ে। আসামিদের বিদ্যালয়ের বারান্দায় বেঁধে রাখা হয়, তারা পালানোর চেষ্টা করেন। তখন হুলুস্থুল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। এমন পরিবেশে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের পাঠদানে অংশ নিতে সমস্যা তৈরি হয়।

উত্তর হালইসার গোয়ালবাথান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, ভবনের নিচতলার দুটি কক্ষে ও ভান্ডারকক্ষে পাঠদান করানো হচ্ছে। একটি কক্ষে শিক্ষকদের বসার ব্যবস্থা। আর দোতলার চারটি কক্ষের একটিতে নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির অফিস কক্ষ। আর তিনটি কক্ষের মধ্যে তাদের মালামাল ও রাত যাপন করার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ওই তিনটি কক্ষের একটিতে ফাঁড়ির ইনচার্জ ও দুটি কক্ষে পুলিশের ১২ সদস্য থাকেন।

পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী সোহাগী আক্তার ও আল হাসান বলেন, পুলিশ যখন কোনো আসামি ধরে বেঁধে নিয়ে আসে, তখন তারা ভয় পান। অনেক সময় শ্রেণিকক্ষের সামনে বেঁধে রাখা হয়। তখন তারা ভয়ে ক্লাস না করে বাড়ি চলে যায়।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল হোসেন বলেন, ‘বিদ্যালয় ভবন থেকে পুলিশ ফাঁড়ি সরিয়ে নেওয়ার অনেক তাগিদ দিয়েছি। নৌ পুলিশের এসপি ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনেকবার চিঠি দিয়েছি। কোনো সাড়া পাইনি।  এভাবে একই ভবনে পুলিশ ফাঁড়ি ও স্কুলের কার্যক্রম চালানো সম্ভব নয়। কিন্তু আমরা নিরুপায়। এলাকার অনেক সচেতন অভিভাবক তাঁদের সন্তানদের আমাদের স্কুলে ভর্তি করান না।’

জানতে চাইলে শরীয়তপুর জেলা প্রথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এরশাদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, পুলিশ ফাঁড়ি আর বিদ্যালয় একই ভবনে চালানো হচ্ছে ২০ বছর ধরে। আমরা বিভিন্ন ফোরামে বিষয়টি জানিয়েছি। কিন্তু কোনো পক্ষই পুলিশ ফাঁড়ি সরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে ভূমিকা নিচ্ছেন না।

এ বিষয়ে নৌ পুলিশের চাঁদপুর অঞ্চলের পুলিশ সুপার (এসপি) কামরুজ্জামান বলেন, ‘বিকল্প না থাকায় বিদ্যালয়ের ভবনের দোতলায় পুলিশ ফাঁড়ির কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। পদ্মা নদীর তীরে সুরেশ্বর বাজারের পাশে একটি জমি অধিগ্রহণের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। সেখানে ভবন নির্মাণ করা হলে আর কোনো সমস্যা থাকবে না। ওই প্রক্রিয়া শেষ হওয়া পর্যন্ত আমরা একটি ভাড়া বাড়ি খুঁজছি। তা পেলে দ্রুত সময়ের মধ্যে বিদ্যালয় থেকে পুলিশ ফাঁড়ি সরিয়ে নেওয়া হবে।’