শনিবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০২৩, ২৪ অগ্রহায়ণ, ১৪৩০, ২৪ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৫

শরীয়তপুরে অপহরণের পর স্কুলছাত্রকে হত্যা

 

শরীয়তপুর সদর উপজেলায় এক স্কুলছাত্রকে অপহরণ ও ৫০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবির পর তাকে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। চার জনকে গ্রেপ্তার ও শিশুটির বালুচাপা দেওয়া মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।

মঙ্গলবার ভোরে একটি ইটভাটার পাশে নদীতীর থেকে শিশুটির মরদেহ উদ্ধার করা হয় বলে জানিয়েছেন পালং মডেল থানার ওসি আকতার হোসেন।

নিহত হৃদয় খান নিবিড় (১১) শরীয়তপুর সদর উপজেলার ডোমসার ইউনিয়নের খিলগাঁও গ্রামের মালয়েশিয়া প্রবাসি মনির হোসেন খানের ছেলে। সে স্থানীয় শিশু কানন কিন্ডারগার্টেন স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল।

মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টায় পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে জানান হয়, ঘটনার খবর পাওয়ার ৭ ঘণ্টার মধ্যে মূল ঘাতকসহ চার জনকে গ্রেপ্তার করে তাদের স্বীকারোক্তি মতে শিশুটির মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।

এ ঘটনায় পালং মডেল থানায় মামলা প্রক্রিয়া চলছে। লাশ ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

গ্রেপ্তার করা হয়েছে, মনির হোসেন খানের বাড়ির ভাড়াটিয়া সিয়াম, খিলগাঁও গ্রামের জলিল গাজীর ছেলে শাকিল গাজী (১৮), পাবনার সিংগা বাজার গ্রামের সাইফুল সরদার এবং খিলগাঁও গ্রামের ১৫ বছরের এক কিশোরকে।

নিহত শিশুর মামা ইকবাল খান জানান, সোমবার বিকালে নিবিড় বাড়ির পাশে রাস্তায় মোবাইল নিয়ে খেলা করছিল। এ সময় বাড়ির ভাড়াটিয়া সিয়াম ও তার সহযোগী কয়েকজন দুষ্কৃতকারী মিলে সুকৌশলে নিবিড়কে একটি মোটরসাইকেলে তুলে অপহরণ করে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায়।

পরে সন্ধ্যা আনুমানিক ৭টায় নিবিড়ের মা নিপা আকতারের মোবাইলে ফোন করে ৫০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে তারা। অপহরণকারীরা তিন ঘণ্টা পরে শিশুটিকে ফেরত দেওয়ার কথা বলে ফোন বন্ধ করে দেয়।

এ ঘটনার পর পরিবারের লোকজন পালং মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করে।

সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার মাহবুব আলম, সোমবার সন্ধ্যায় অপহৃত শিশুটির নানা মমিন আলী খান একটি অভিযোগ দায়ের করেন। এর পরেই পুলিশ তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় শিশুটিকে উদ্ধার কার্যক্রম শুরু করে।

প্রথমে মোবাইল ফোনের তথ্যের ভিত্তিতে সিয়ামকে আটক করা হয়। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে সে অপহরণের কথা স্বীকার করে এবং সহযোগীদের নাম প্রকাশ করে। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে শাকিল ও আরেকজনকে আটক করা হয়।

তাদের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে মঙ্গলবার ভোর ৫টার দিকে তারা নিবিড়কে খুনের কথা স্বীকার করে। পরে তাদের দেখানো স্থান থেকে শিশুটির লাশ উদ্ধার করা হয়।

পুলিশ সুপার আরও জানান, ঘটনার তিন দিন আগে নিবিড়কে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়ের পরিকল্পনা করা হয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী সোমবার বিকালে নিবিড়কে কৌশলে জলিল খাঁর ইটের ভাটা সংলগ্ন আলি হোসেন খাঁর বাড়ির পিছনে নির্জন বাগানে নিয়ে যায় তারা।

তখন নিবিড় চিৎকার করলে অপহরণকারীরা তাকে হাত পা চেপে ধরে মাথায় আঘাত ও শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। পরে ঐ ইটভাটার পাশে নদীর তীরে লাশটি বালু চাপা দিয়ে গুম করে পালিয়ে যায়।

মাহবুব আলম জানান, সিয়ামের বাড়ি পাবনা জেলায়। সে ১২-১৩ বছর যাবত মনির খানের বাড়িতে ভাড়া থাকে এবং পার্শ্ববর্তী খান ব্রিকস ইটভাটায় গাড়ি চালায়। ঘটনার পর সিয়ামও নিখোঁজ শিশুর স্বজনদের সঙ্গে মিলে শিশুটিকে খোঁজাখুঁজি করছিল।

প্রেস ব্রিফিংয়ে আরও উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তানভির হয়দার শাওন, পালং মডেল থানার ওসি আকতার হোসেন।

হৃদয়ের চাচা নাসির আহম্মেদ বলেন, “দুর্বৃত্তরা আমাদের সন্তানকে টাকার জন্য অপহরণ করে হত্যা করবে, তা ভাবতে পারিনি। ফোন করে টাকা চেয়ে আর সময় দেয়নি। পুলিশ নিয়ে আমরা ছেলেকে জীবিত উদ্ধারের চেষ্টা চালাই। কিন্তু তার প্রাণহীন দেহটা উদ্ধার করেছি।”

শিশুকানন কিন্ডারগার্টেনের প্রধান শিক্ষক বাদল পাল বলেন, “হৃদয়ের মত মেধাবী ও ভদ্র ছেলের এমন করুণ পরিণতি আমরা মানতে পারছি না। অপহরণ করে শিশু হত্যার ঘটনা আমাদের উদ্বিগ্ন করেছে।”

এ ব্যাপারে শিশু নিবিড়ের মা নিপা আকতার কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার বুকের ধনকে অপহরণ করে আমার কাছে ৫০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেছে। মুক্তিপণ চেয়েও মোবাইল বন্ধ করে রাখে। আমি হত্যাকারীদের ফাঁসি চাই।

পালং মডেল থানার ওসি আকতার হোসেন বলেন, আসামিদেরকে অধিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ড চেয়ে আদালতে সোপর্দ করা হবে।