
শরীয়তপুরে এক মণ দুধ দিয়ে গোসল করে হাসেম সরদার (৬০) নামে এক আওয়ামী লীগ কর্মী বিএনপিতে যোগদান করেছেন। গতকাল শুক্রবার (১ সেপ্টেম্বর) বিএনপির ৪৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে শরীয়তপুর শহরের ধানুকা এলাকায় শরীয়তপুর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সরদার একেএম নাসিরউদ্দিন কালুর বাসভবনের সামনে তিনি দুধ দিয়ে গোসল করেন।
হাসেম সরদারের দাবি- সর্বশেষ তিনি শরীয়তপুর পৌরসভার ৭ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের-সহ সভাপতি ছিলেন।
তবে ওই কমিটিতে তার নাম দেখা যায়নি। তিনি আওয়ামী লীগের কর্মী বলে জানিয়েছেন ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের একাধিক নেতারা।
এদিকে হাসেম সরদারের দুধ দিয়ে গোসলের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওতে দেখা যায়, হাসেম সরদার নিজেই মাথায় দুধ ঢেলে গোসল করছেন। কেউ কেউ আবার তার মাথায় দুধ ঢেলে দিচ্ছেন। দুধ দিয়ে গোসল করার সময় আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ¯েøাগান দিয়ে হাসেম সরদার বিএনপিতে যোগদানের ঘোষণা দেন।
হাসেম সরদার জানিয়েছেন, প্রথমে ১০ কেজি দুধ এনে গোসল শুরু করলে আমার শুভাকাঙ্ক্ষীরা আরও ৩০ কেজি দুধ এনে দিলে সেই দুধ দিয়ে গোসল করে বিএনপিতে যোগদান করেছেন।
শরীয়তপুরের বিএনপি ও আওয়ামী লীগের নেতারা জানান, শরীয়তপুর পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের হুগলি এলাকার বাসিন্দা আবুল হাশেম সরদার। তিনি পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের কর্মী হিসেবে পরিচিত। তিনি বিভিন্ন সময়ে আওয়ামী লীগের সভা-সমাবেশে যোগ দিতেন। তিনি গতকাল জেলা বিএনপি আয়োজিত দলটির ৪৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে যোগ দেন। সেখানে বিএনপির নেতা-কর্মীদের উপস্থিতিতে মাথায় ৪০ লিটার গরুর দুধ ঢালেন। ওই দুধ দিয়ে গোসল করে বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনা সভার মঞ্চে ওঠেন। মঞ্চে উঠে তিনি বিএনপিতে যোগদানের ঘোষণা দেন। এরপর জেলা বিএনপি নেতারা মাইকে ঘোষণা দিয়ে তাঁকে বরণ করে নেন।
আবুল হাসেম সরদার বলেন, ‘আগে আমি ঢাকায় থাকতাম। তখন অনেক আন্দোলন-সংগ্রামে আওয়ামী লীগের হয়ে কাজ করেছি। বিএনপির নেতাদের দেওয়া মামলায় বেশ কয়েকবার কারাগারে গিয়েছি। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর সেভাবে মূল্যায়ন পাইনি। গ্রামে ফিরে এসে রাজনীতি করতে থাকি। যুবলীগ করেছি। ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহসভাপতি করছে, তাও মৌখিক। কমিটির কোনো অনুমোদন নেই। নেতারা “হাইব্রিড” নিয়ে মাতামাতি করছেন। তাঁদের টাকাপয়সা বানিয়ে দিচ্ছেন। আমাদের মতো ত্যাগী কর্মীকে মূল্যায়ন করেন না। বাধ্য হয়ে দল ছেড়ে বিএনপিতে যোগদান করেছি।
শরীয়তপুর পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলমগীর ঢালী বলেন, ‘আবুল হাসেম বিভিন্ন সময় বিভিন্ন দল করেন। তাঁর কোনো স্থিরতা নেই। এক সময় যুবলীগ করতেন। বিভিন্ন সময় মিছিল-মিটিং নিয়ে দলীয় কর্মসূচিতে অংশ নিতেন। এখন বিএনপি নেতাদের সঙ্গে থাকেন। কেন মাথায় দুধ ঢেলে আওয়ামী লীগ ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছেন, তা বলতে পারছি না। তিনি আওয়ামী লীগের স্থানীয় পর্যায়ের কোনো নেতা নন।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ছাত্রলীগের এক নেতা বলেন, ‘আবুল হাসেম একটু পাগলাটে। মিছিল-মিটিংয়ে ¯েøাগান দিত। দলীয় সব কর্মসূচিতে উপস্থিত হতে দেখতাম। কিছুদিন আগে শরীয়তপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য ইকবাল হোসেনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে ৫০ হাজার টাকার আর্থিক সহায়তাও পেয়েছেন। বিএনপি স্থানীয় পর্যায়ে আলোচনায় আসার জন্য হাসেমকে দিয়ে এমন একটি কাজ করিয়েছে।’
শরীয়তপুর পৌরসভার ৭ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল আজিজ বেপারী বলেন, হাসেম সরদার আওয়ামী লীগের কর্মী। তিনি দলের পদধারী কোনো নেতা নন। তিনি যে দাবি করেছেন ৭ নং ওয়ার্ডের সহ-সভাপতি তা মিথ্যা। আওয়ামী লীগের কর্মসূচি থাকলে এলাকার লোক হিসেবে তাকে ডেকে নিয়ে আওয়ামী লীগের মিছিল-মিটিংয়ে যেতাম আমি। উনি দুধ দিয়ে গোসল করে বিএনপিতে যোগদান করেছেন এটা সম্পূর্ণ উনার ব্যক্তিগত বিষয়। দুধ দিয়ে গোসল করে দল ছাড়ার সাথে আওয়ামী লীগের কোনো সম্পর্ক নেই।
এ ব্যাপারে শরীয়তপুর জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি আবদুস সালাম শাহ বলেন, ‘আবুল হাসেম আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তাদের দুঃশাসনে তিনি ব্যথিত হয়েছেন। এ কারণে মাথায় গরুর দুধ ঢেলে গোসল করে বিএনপিতে যোগদানের ঘোষণা দিয়েছেন। আমরাও তাঁকে বিএনপিতে বরণ করে নিয়েছি।
হাসেম সরদারের বিএনপিতে যোগদানের বিষয়টি নিশ্চিত করে শরীয়তপুর জেলা বিএনপির সভাপতি শফিকুর রহমান কিরন বলেন, আওয়ামী লীগের এক নেতা দুধ দিয়ে গোসল করে আওয়ামী লীগ ছেড়ে বিএনপিতে যোগদান করেছেন। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচিতে মাইকে ঘোষণা দিয়ে গতকাল তাকে আমরা বরণ করে নিয়েছি।